কুমিল্লায় ধীরগতিতে কমছে পানি, ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন; বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কষ্ট
কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙন, ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়া কুমিল্লার পরিস্থিতি এখনো স্বভাবিক হয়নি। জেলার ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আট দিন পার হলেও এখনো বন্ধ হয়নি ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানি। তবে আগের চেয়ে উজানের পানির প্রবাহ কিছুটা কমেছে। কুমিল্লা জেলায় বানের পানির উচ্চতা কিছুটা কমলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
এদিকে পানি কামায় ভেসে উঠছে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের চিত্র। রাস্তার উপর দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া পানির স্রোতের তীব্রতায় প্রায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রবল স্রোতে পানির চাপে বিভিন্ন স্থান ভেঙে যায় রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে গড়িয়ে যাওয়ায় ধসের ঘটনা ঘটেছে। দেখা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে কম বেশি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু কিছু রাস্তা ধসে বিভক্ত হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিনে জেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে গত ২২ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় যেই স্থান দিয়ে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙেছিল- সেই স্থান দিয়ে এখনো স্রোতের মতো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে বুড়িচং ও পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ আকারে রয়েছে। পাশের দেবীদ্বার উপজেলায় প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছেন নতুন কোনো এলাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহ কিছুটা কমলেও তা একেবারে বন্ধ হয়নি। গোমতীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, গোমতীর পানি গত দুই দিন ধরে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও যেই স্থান দিয়ে বাঁধ ভেঙেছে সেটি মেরামত করতে আরো অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। কারণ ওই স্থান দিয়ে এখনো লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে গোমতীর বাঁধ ভাঙা অংশ বুড়িচংয়ের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙা সেই অংশ দিয়ে অবিরত পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে লোকালয়ের দিকে। এসব পানি বুড়িচংয়ের নিম্নাঞ্চল দিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবীদ্বার উপজেলার দিকে গিয়ে সেসব এলাকাকে প্লাবিত করছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িচং উপজেলার প্লাবিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন স্থানে পানি কিছুটা কমেছে। ধীরগতিতে পানি কমার ফলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও তা খুবই অপ্রতুল।
কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান, কুমিল্লা জেলাজুড়ে ১২৫ টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে দুই লক্ষাধিক পরিবার। জেলাজুড়ে ৭২৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এই ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও বন্যায় পানিবন্দিদের পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য ২০৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ূব মাহমুদ বলেন, বন্যায় জেলাজুড়ে ৬৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানি নিচে প্লাবিত হয়েছে। যেহেতু এখনো অনেক এলাকায় পানি ঢুকছে সেহেতু ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। বন্যার পানি কমার পর সঠিক তথ্য জানা যাবে কি পরিমাণ ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ বলেন, কুমিল্লা জেলা জুড়ে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রায় ৪শত কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page